শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০০৯

ইন্টেলের অ্যাটম প্রসেসর

ইন্টেল করপোরেশন। আজকাল তথ্যপ্রযুক্তির সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত খুব কম ব্যক্তিই পাওয়া যাবে যে এই নামটির সাথে পরিচিত নন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি। ১৯৬৮ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ পার্সোনাল কমপিউটারে ব্যবহৃত প্রসেসরই ইন্টেলের তৈরি। শুধু প্রসেসরই নয়-মাদারবোর্ড চিপসেট, নেটওয়ার্ক কার্ড ও আইসি, ফ্ল্যাশ মেমরি, গ্রাফিক্স চিপস, এমবেডেড প্রসেসর এবং কমপিউটিং ও কমিউনিকেশন সংক্রান্ত আরও অনেক ডিভাইসের প্রস্তুতকারক এই কোম্পানি। বিশ্বে ডেস্কটপ কমপিউটার, নোটবুক কমপিউটার কিংবা এ জাতীয় আরো কিছু ডিজিটাল ডিভাইসে ব্যবহৃত মাইক্রোপ্রসেসরের বাজারের বেশিরভাগই ইন্টেল দখল করে আছে। সম্প্রতি ইন্টেল এর নতুন বাজারের জন্য অ্যাটম চিপ ডিজাইন করেছে। আমাদের এই লেখা ইন্টেলের তৈরি এ নতুন চিপ নিয়ে।

ইন্টেলের রয়েছে প্রসেসরের বিশাল সমাহার। সেলেরন প্রসেসর থেকে শুরু করে কোয়াড কোর প্রসেসরের সর্বশেষ সংস্করণসহ সবই এখন পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টেলের রয়েছে ডেস্কটপ চিপ, সার্ভার চিপ এবং মোবাইল চিপ। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, বিশ্বে চিপের এমন কোনো বাজার নেই যেখানে ইন্টেল প্রবেশ করেনি। কিন্তু প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ডিভাইস আমাদের সামনে আসছে। বিগত কয়েক বছরে ‘আলট্রা মোবাইল পিসি’ নামে এক ধরনের কমপিউটার আমাদের সামনে এসেছে। ইন্টেল এই নতুন বাজারটি চিনতে পেরেছে এবং এই ‘আলট্রা মোবাইল পিসি’র (ইউএমপিসি) জন্য ইন্টেল অ্যাটম সিপিইউ নামের এ চিপ ডিজাইন করেছে।

এক্সস্কেল :
আপনার যদি পকেট পিসি, পিডিএ, এমপিথ্রি প্লেয়ার, পার্সোনাল ভিডিও প্লেয়ার কিংবা আইপড থেকে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে এক্সস্কেল সিপিইউর কথা শুনেছেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত (এক্সস্কেল সিপিইউর ব্যবসায় পুরোপুরি বিক্রি করে দেয়ার সময়) ইন্টেলই এক্সস্কেল সিপিইউ তৈরি করত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মোবাইল ডিভাইসের জন্য ইন্টেলের এই প্রসেসরটি থাকা সত্ত্বেও কেন ইন্টেল এর ব্যবসায় বন্ধ করে দিল এবং কেনই বা মোবাইল ডিভাইসের জন্য অন্য একটি প্রসেসরের ব্যবসায় শুরু করল? এর উত্তর হিসেবে ইন্টেল বলে, তারা এখন এক্সস্কেল সিপিইউ বাদ দিয়ে এক্স৮৬ চিপ, যেমন- ডেস্কটপ, মোবাইল এবং সার্ভার সিপিইউর দিকে নজর দিতে চায়।

এক্সস্কেল এবং অ্যাটমের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো, এক্সস্কেল সিপিইউ শুধু হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসসমূহের জন্য। কিন্তু অ্যাটম একটি পরিপূর্ণ এক্স৮৬ সিপিইউ, যা একটি সাধারণ পিসিতেও চলতে পারে। একটি এক্সস্কেল সিপিইউ একটি সাধারণ পিসিতে বসালে সেই পিসি কাজ করবে না।

অ্যাটম :
এক্সস্কেল এবং ইউএলভি (আলট্রা ভায়োলেট) সিপিইউগুলো যেখানে খাপ খায় না, সেখানে ইন্টেল অ্যাটম খাপ খায়। এক্সস্কেলের আকার ও কুলিং পাওয়ার এবং ইউএলভির পাওয়ার ও এক্স৮৬ আর্কিটেকচারের চেয়ে অ্যাটমের সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলো অনেক উন্নততর। অ্যাটম শুধু ৩২ বিট অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যারই চালায় না, ৬৪ বিটের অপারেটিং সিস্টেম এবং সফটওয়্যারও চালাতে পারে। যেহেতু অ্যাটম প্রসেসর ইউএমপিসির দিকে ধাবিত, তাই এর আলাদা ইনস্ট্রাকশনগুলো মাল্টিমিডিয়া ও গেমিংয়ের কাজে বেশ সহায়ক।

অ্যাটমের আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো এর আকার। একটি পিসির সম্পূর্ণ গঠনের কথা চিন্তা করলে সাথে সিপিইউকে অন্যান্য অংশের তুলনায় ছোট মনে হয়। কিন্তু অ্যাটম প্রকৃতভাবেই খুব ছোট। ফলে যেকোনো ছোট ডিভাইসের সাথে এর সমন্বয় করা খুব সহজ।

অ্যাটমের সবচেয়ে সুবিধাজনক বিষয় হচ্ছে এ দিয়ে উৎপন্ন তাপ। অ্যাটম ০.০১ ওয়াট থেকে ২.৫ ওয়াট তাপ উৎপন্ন করে, যেখানে একটি ইউএলভি সিপিইউ উৎপন্ন করে ১০ ওয়াট। ফলে অ্যাটম সিপিইউতে হিট সিঙ্কের ব্যবহার মোটামুটি অপ্রয়োজনীয়।

পারফমেন্স :
অ্যাটম সিপিইউ দুটি ভিন্ন ভিন্ন কোড নামে আছে। একটি ইউএমপিসির জন্য এবং অন্যটি ছোট ডেস্কটপ কমপিউটারের জন্য। ইউএমপিসির জন্য অ্যাটমের কোড নাম সিলভারথ্রোন। এটি একটি সিঙ্গেল কোর সিপিইউ। মডেলের ওপর ভিত্তি করে এটি সাধারণত ১.৬ গিগাহার্টজ থেকে ১.৮ গিগাহার্টজ ক্লক স্পিডে চলে। ডেস্কটপ কমপিউটারের জন্য অ্যাটমের কোড নাম ডায়মন্ডভিল। এটি সিঙ্গেল কোর ও ডবল কোর এই দুই মডেলেই বাজারে আসবে। এর ক্লক স্পিড হবে ২.৩ গিগাহার্টজ। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, তুলনামূলকভাবে কোন কোন দিক দিয়ে অ্যাটম সিপিইউ অন্যান্য সিপিইউ থেকে ভালো। এর আকার ও কুলিং পাওয়ার নিয়ে আগে আলোচনা করা হয়েছে। এর গতি হবে পেন্টিয়াম-৩ ১.১ গি. হা. এবং সেলেরন এম ১.৮ গি. হা.-এর মাঝামাঝি কোনো গতি। খুব শিগগিরই অ্যাটম সিপিইউতে কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই উইন্ডোজ ভিসতা চলতে পারবে। এছাড়া নিকট ভবিষ্যতে ডিডিআর ২ মেমরি কন্ট্রোলার এবং গ্রাফিক্স কোর সংবলিত অ্যাটম চিপ বাজারে আসবে। এই বৈশিষ্ট্য অবশ্যই মাদারবোর্ডের আকার ছোট করবে। পাইনভিউ কোড নামের এ ভবিষ্যৎ অ্যাটম চিপ সিঙ্গেল কোর ও ডবল কোর- এ দুই ধরনেই আসবে।

অ্যাটম ডিভাইস :
অ্যাটম সিপিইউ সংবলিত নতুন নতুন ডিভাইস যথারীতি আমরা দেখতে শুরু করেছি। জনপ্রিয় ASUS EEE মডেলে ইএমপিসি অ্যাটম সিপিইউ দিয়ে তৈরি। এটা অনেকটা পুরনো-এর মতোই। কিন্তু এখানে সেলেরন এম প্রসেসরের পরিবর্তে অ্যাটম সিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে।

শার্প উইলকম কোম্পানির একটি কমপিউটার রয়েছে, যা অ্যাটম প্রসেসর ব্যবহার করে। এর রয়েছে ১ গি. বা. র‌্যাম, ৪০ গি. বা হার্ডডিস্ক, ১টি ২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, ওয়াইফাই এবং ব্লু টুথ সংযোগ। এতে ভিসতা হোম প্রিমিয়াম এসপি ১ এবং মাইক্রোসফট অফিস রান করবে। এ ডিভাইসটি সেলফোন হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

শেষ কথা :
ইন্টেলের নতুন সিপিইউ ইউএমপিসি বাজারে একটি বিশাল প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। কমপিউটিংয়ের জন্য এটি ইন্টেলের একটি বড় পদক্ষেপ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি একটি বিস্ময়কর সিপিইউ হবে বলে আশা করা যায়।

সৌজন্যে : কম্প্উটার জগৎ ASUS EEE

0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Best Buy Coupons