সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

আসুন সহজে পিসি-টু-পিসি LAN করি (পর্ব – ১)

মাহমুদ



LAN বলতে Local Area Network বোঝানো হয়। এই LAN দুটি পিসি থেকে শুরু করে ছোট পরিসরে অসংখ্য পিসির মধ্যে হতে পারে। শুধু পিসিই নয় LAN এ যুক্ত হতে পারে প্রিন্টার, আইপি ফোন, সার্ভারসহ IP সাপোর্ট করে এমন যেকোন ডিভাইস। আপনি এই LAN কে চাইলে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করতে পারেন অথবা শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে ফাইল বা কন্টেন্ট শেয়ারিং এর মধ্যেও সীমাবদ্ধ রাখতে পারেন। এখন অনেকেই মাল্টিপ্লেয়ার গেমসের সাথে পরিচিত, ল্যান করে মাল্টিপ্লেয়ার গেমস খেলার মজাই আলাদা।



আসুন এবারে দেখা যাক LAN তৈরী করার জন্য আপনার কি কি জিনিষ লাগবে :
১। UTP LAN Cable (CAT6 হলে ভালো, না হলে CAT5 হলেও চলবে)।



২। RJ45 Connector (Micronet এরটা বেশ ভালো)।



৩। ক্রিমপার (Crimper)।



৪। মাদারবোর্ডের বিল্ট-ইন LAN পোর্ট অথবা LAN Card।



৫। হাব (HUB) অথবা সুইচ (Switch) [যদি দুই এর অধিক পিসির মধ্যে LAN করতে চান]।

প্রথমে ধরে নিচ্ছি আপনি দুটি পিসির ভেতরে ল্যান করবেন। সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমে আপনার দুটি পিসির মধ্যে দূরত্ব অনুযায়ী UTP Cable কেটে নিন। UTP Cable এর সবোচ্চ দূরত্ব ১০০ মিটার। এর বেশী দূরত্ব হলে মাঝে ১০০ মিটার পরপর হাব অথবা সুইচ ব্যবহার করতে হবে। Cable এর মাপ নেয়া হয়ে গেলে ক্যাবল কাটার জন্য Crimper ব্যবহার করুন। Cable কাটার পরে কভারটি সরালেই ভেতরে আরও ৪ জোড়া চিকন ক্যাবল দেখতে পাবেন। এদের রং হচ্ছে কমলা, নীল, সবুজ, খয়েরী। এটি যদি CAT6 ক্যাবল হয় তবে এর ভেতরে বাড়তি একটি প্লাস্টিকের দন্ড থাকে।

এবার ক্যাবলের দুই প্রান্তে কানেক্টর লাগানোর পালা, 8B RJ45 Connector দুভাবে সাজিয়ে লাগানো যায়। একটি হচ্ছে T568A এবং অন্যটি T568B। নিচের চিত্রটি লক্ষ করুন।



চিত্রে ১ নং পিন থেকে ৮ নং পিন পর্যন্ত ক্যাবল সাজানোর কৌশল দেয়া আছে। আপনি যদি একই ধরনের ডিভাইস (যেমন : পিসি টু পিসি অর্থাৎ দুটি কম্পিউটারের মধ্যে) LAN করেন, তাহলে আপনাকে Crossover Cable করে ডিভাইস দুটি কানেক্ট করতে হবে। অর্থাৎ ক্যাবলের একপ্রান্তে কানেক্টরের বিন্যাস হবে T568A এর মত এবং অন্যপ্রান্তের কানেক্টরটির বিন্যাস হবে T568B এর মত। নিচের চিত্রে Crossover Cable তৈরী করার একটি উদাহরন দেয়া হলো।



কিন্তু আপনি যদি ভিন্ন ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করেন (যেমন: পিসি টু সুইচ) সেক্ষেত্রে Straight Through Cable দিয়ে ডিভাইসগুলোকে কানেক্ট করতে হবে। অর্থাৎ তখন ক্যাবলের দুই প্রান্তের কানেক্টরেরই বিন্যাস হবে T568A অথবা T568B যেকোন এক ধরনের। নিচের চিত্রের Straight Through Cable এর উদাহরনটি লক্ষ্য করুন।



কখন Straight Though আর কখন Crossover ব্যবহার করবেন এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমি নিচে একটি তালিকা দিচ্ছি :

straight-through cables ব্যবহার করুন :
১। Switch to router
২। Computer to switch
৩। Computer to hub

Crossover cables ব্যবহার করুন :
১। Switch to switch
২। Switch to hub
৩। Hub to hub
৪। Router to router
৫। Computer to computer
৬। Computer to router

৮টি চিকন ক্যাবল চিত্রের মত করে সাজানো হয়ে গেলে ক্যাবলগুলোর মাথা Crimper এর সাহায্যে কেটে সমান করে নিন। এবার ধীরে যত্নসহকারে ক্যাবলগুলোকে একই সাথে কানেক্টরে ঢোকান, খেয়াল রাখবেন কানেক্টরের ভেতরে একটি ক্যাবল যেন অন্য আর একটির ওপর ওভারল্যাপ না করে। ঢোকানো হয়ে গেলে কানেক্টরের ওপর দিক থেকে তাকিয়ে দেখুন সবগুলো তার জায়গামত বসেছে কিনা এবং শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌছেছে কিনা। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তবে কানেক্টরটিকে Crimper এর 8B Connector ছিদ্রে বসিয়ে লিভারে চাপ দিন। কট্ করে একটি শব্দ শোনার আগ পর্যন্ত চাপ দিতে থাকুন। ব্যাস, আপনার ক্যবলে কানেক্টর লাগানো শেষ।

এখন আপনি যদি দুইয়ের অধিক কম্পিউটার ল্যানে যুক্ত করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে হাব অথবা সুইচ ব্যবহার করতে হবে। হাব এবং সুইচ দুটিই প্রায় একই কাজ করে যদিও সুইচ হাব অপেক্ষা দ্রুত এবং নিরাপদ। কিন্তু হাবের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এবং ছোট নেটওয়ার্কে হাব এবং সুইচের পারফরমেন্স প্রায় একই হওয়ায় অনেকেই এখনও হাব ব্যবহার করেন। বাজারে ৮ পোর্টের DLink সুইচের দাম পড়বে ১২০০/= টাকার মত। এটি সাধারন মানের Switch, এর চাইতে ভালো পারফরমেন্স চাইলে Manageable Switch ব্যবহার করতে হবে যার দাম ১৫,০০০/= টাকা যা ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। ৮ পোর্টের সুইচ দিয়ে আপনি ৮ টি পিসিকে কানেক্ট করে নেটওয়ার্ক তৈরী করতে পারবেন। এর চাইতেও বেশী কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কানেক্ট করার প্রয়োজন হলে অধিক পোর্টের সুইচ অথবা একাধিক সুইচ ব্যবহার করতে পারবেন। সুইচ ব্যবহার করে স্টার টপোলজি নেটওয়ার্কের চিত্র নিচে দেয়া হলো।



উপরের চিত্রটি লক্ষ্য করুন, এখানে মাঝখানে যে ডিভাইসটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হচ্ছে Switch আর তার চারপাশে পিসি এবং অন্যান্য IP Device গুলো রয়েছে। স্টার টপোলজিতে কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইসগুলো সুইচ বা হাবকে কেন্দ্রে রেখে পুরো নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। নেটওয়ার্কের একটি পিসি থেকে অন্য পিসিতে ডাটা পাঠাতে গেলে ডাটাটি প্রথমে সুইচে যাবে তারপর সুইচ বলে দেবে কোন পোর্ট দিয়ে গেলে গন্তব্যের (Destination) পিসিতে পৌছানো যাবে, তখন ডাটাটি সেই পোর্ট দিয়ে গন্তব্যের (Destination) কম্পিউটারে পৌছে যাবে। অর্থাৎ স্টার টপোলজিতে সুইচ বা হাব সবসময় ভায়া হিসেবে কাজ করছে। সুতরাং যদি আপনি সুইচ বা হাবটি বন্ধ করে রাখেন, তাহলে আপনার পুরো নেটওয়ার্কই বন্ধ হয়ে থাকবে। কারন সুইচ দিয়েই পিসিগুলো কমিউনিকেট করছে।এখানে মনে রাখবেন, পিসি থেকে সুইচ পর্যন্ত Straight-through Cable ব্যবহার করতে হবে। কারন সুইচ এবং পিসি ভিন্ন ধরনের ডিভাইস। সাধারন সুইচে কোন ধরনের কনফিগারেশনের প্রয়োজন হয় না।

সূত্র

0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Best Buy Coupons