সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

আসুন সহজে পিসি-টু-পিসি LAN করি (পর্ব – ৫)



আজকের পর্ব : নেটওয়ার্কিং ডিভাইস পরিচিতি

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরী করার জন্য কম্পিউটার এবং ক্যাবল ছাড়াও আরও বেশ কিছু ডিভাইসের প্রয়োজন হয়। নেটওয়ার্ক তৈরী করার জন্য কোন ডিভাইসের কি কাজ, কোন ক্ষেত্রে কোন ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে এবং ডিভাইসগুলোর মধ্যে পার্থক্য জানা প্রয়োজন। এ কারনে আমি অল্প কথায় সহজ ভাষায় নেটওয়ার্কিং ডিভাইসগুলোর পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।



প্রথমে OSI Layer সম্পর্কে কিছুটা ধারনা দেয়া প্রয়োজন, কারন এই লেয়ারগুলোর উপর ভিত্তি করেই নেটওয়ার্কিং ডিভাইসগুলো কাজ করে।



উপরের চিত্রে OSI Layer এর মডেল দেয়া আছে, যা ৭ টি স্তরে বিভক্ত। কোনো প্রেরক (Sender) ডিভাইস (যেমন: কম্পিউটার) থেকে ডাটা প্রবাহিত হওয়ার সময়, প্রেরক ডিভাইসের ডাটা উপরের লেয়ার থেকে নিচের লেয়ারের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। প্রতিটি লেয়ারে সেই ডাটাকে নিয়ে কিছু কাজ হয়, তারপর পরবর্তী লেয়ারে পঠিয়ে দেয়। এভাবে কোন ইউজার যখন কোন ডাটা পাঠায় তখন সেটি প্রথমে আসে এপ্লিকেশন লেয়ারে, এরপর প্রেজেন্টেশন, সেশন .... এভাবে চলতে চলতে ফিজিক্যাল লেয়ার পর্যন্ত। ফিজিক্যাল লেয়ারে এসে ডাটা পুরোপুরি মেশিন কোডে রুপান্তরিত হয়, যা ক্যাবলের মধ্যে দিয়ে গন্তব্যে পাঠানো হয়। গন্তব্যে পৌছে প্রাপক (Receiver) ডিভাইসটি ফিজিক্যাল লেয়ারে ডাটাটি গ্রহন করে উপরের দিকের লেয়ারে পাঠাতে থাকে এবং এপ্লিকেশন লেয়ারে পৌছানোর পর আমরা সেই ডাটাটি দেখতে পারি। এটাই মূলত OSI Layer এর কাজ। এখানে মনে রাখতে হবে, নেটওয়ার্কিং ডিভাইসগুলো শুধুমাত্র ফিজিক্যাল, ডাটা লিংক এবং নেটওয়ার্ক এই ৩ টি লেয়ারে কাজ করতে পারে।

NIC Card বা ল্যান কার্ড : NIC Card বা ল্যান কার্ডের সাথে আমরা সবাই পরিচিত, এটি কম্পিউটারের সাথে লাগানো থাকে এবং প্রতিটি ল্যান কার্ড দিয়ে একটি মাত্র কানেকশন লাগানো যায়। একাধিক কানেকশন ব্যবহারের প্রয়োজন হলে একই কম্পিউটারে একাধিক ল্যান কার্ডও চাইলে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিটি ল্যান কার্ডে একটি নির্দিষ্ট ফিজিক্যাল এড্রেস থাকে যাকে ম্যাক এড্রেস (MAC Address) বলা হয়। এই ম্যাক এড্রেস প্রতিটি ল্যান কার্ডের জন্য তৈরী করার সময়ই নিদিষ্ট করে দেয়া থাকে, যা পরিবর্তন করা যায় না। এই ম্যাক এড্রেস ব্যবহার করা হয় OSI Layer এর ফিজিক্যাল লেয়ারে। রাউটিং এর জন্য এই ম্যাক এড্রেস খুবই গুরুত্বপূর্ন। এছাড়া ল্যান কার্ডে একটি লজিক্যাল এড্রেস বা আইপি এড্রেস বসাতে হয় যা নেটওয়ার্ক লেয়ারে কাজ করে।

হাব (Hub) : হাব একটি নেটওয়ার্ক ইন্টারকানেক্টিং ডিভাইস, যা ব্যবহার করে স্টার টপোলজি তৈরী করা যায়। হাব OSI Layer লেয়ারের শুধুমাত্র ফিজিক্যাল লেয়ারে কাজ করে।



হাব দামে সস্তা এবং সহজে ব্যবহার করা যায় তাই অনেকেই ছোট নেটওয়ার্কের জন্য হাব ব্যবহার করেন। কিন্তু সুবিধার পাশাপশি হাব ব্যবহারের বেশ কিছু অসুবিধাও আছে। যেমন : হাবের কোন নিজস্ব রাউটিং টেবিল নেই, যার কারনে সে তার সাথে সরাসরি যুক্ত নেটওয়ার্ক বা ডিভাইস চিনতে পারে না। তাই হাব যখন কোন ডাটা পায় তখন সে তার সাথে পোর্টে যুক্ত সবগুলো ডিভাইসকে সেই একই ডাটা কপি করে পাঠিয়ে দেয়। এরপর প্রাপক কম্পিউটারটি ছাড়া বাকি কম্পিউটারগুলো ডাটাটি পরীক্ষা করে যখন দেখে যে, এটি তার জন্য পাঠানো হয়নি তখন ডাটাটি ডিলিট করে দেয়। এভাবেই হাব যত ডাটা পায় তা তার সাথে পোর্টে যুক্ত সবাইকে পঠিয়ে দেয়, যা ডাটার সিকিউরিটি এবং মূল্যবান ব্যান্ডউইথ নষ্ট করে। বড় নেটওয়ার্কের মাঝে একটি হাব পুরো নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। একারনে বর্তমানে হাবের ব্যবহার কিছুটা কমে এসেছে এবং এর বদলে কম দামের এক ধরনের সুইচের ব্যবহার বেড়েছে। এই সব সুইচের দাম ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে এবং হাবের চাইতে কিছুটা ভাল কাজ করে। তাই যারা ছোট নেটওয়ার্ক তৈরী করবেন তাদের জন্য এই সুইচ কেনাই সবচেয়ে ভাল হবে, ডি-লিংক এবং আসুস ব্রান্ডর সুইচগুলো বেশ ভাল কাজ করে দেখেছি।

সুইচ (Switch): সুইচ এবং হাব একই কাজ করলেও, সুইচ হাবের চাইতে উন্নত। সুইচ আর হাবের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সুইচের নিজস্ব রাউটিং টেবিল আছে। এই টেবিলে সে তার সাথে যুক্ত সকল নেটওয়ার্ক এবং নেটওয়ার্কে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোর ডাটা সংরক্ষন করে রাখে।



সুইচ যেহেতু ফিজিক্যাল এবং ডাটালিংক লেয়ারে কাজ করে তাই তার সাথে যুক্ত কম্পিউটারের ডাটা হিসেবে সে ল্যান কার্ডের MAC Address ব্যবহার করে। যখন একটি ডাটা সুইচের কাছে আসে সে তখন সেই ডাটাটির প্রাপক কম্পিউটারের MAC Address তার রাউটিং টেবিলের সাথে মিলিয়ে দেখে। মিলে গেলে প্রাপক কম্পিউটারটি সুইচের যে পোর্টের সাথে যুক্ত সেই পোর্ট দিয়ে ডাটাটি পাঠিয়ে দেয়। যার ফলে যেকোন ডাটা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রাপক কম্পিউটারের কাছেই পৌছায়। সাধারন মানের সুইচ সবসময় একটি নেটওয়ার্ক নিয়েই কাজ করতে পারে। তবে ম্যানেজেবল সুইচকে VLAN (Virtual LAN) করে ভাগ করে একাধিক নেটওয়ার্কে কাজ করানো যায়। ম্যানেজেবল সুইচের দাম সাধারন সুইচের চাইতে অনেক বেশি, যেমন Cisco কোম্পানীর একটি ৮ পোর্টের ম্যানেজেবল সুইচের দাম ১৫ হাজার টাকার মত। তাই এগুলো শুধুমাত্র বড় এবং গুরুত্বপূর্ন নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে কিছু উন্নত প্রযুক্তির ৩ লেয়ারের সুইচ রয়েছে, যা নেটওয়ার্ক লেয়ার পর্যন্ত সরাসরি IP Address নিয়ে কাজ করতে পারে।

রাউটার (Router): রাউটার একটি ৩ লেয়ার ডিভাইস, অর্থাৎ এটি OSI Layer এর ফিজিক্যাল, ডাটালিংক এবং নেটওয়ার্ক লেয়ার নিয়ে কাজ করতে পারে। একারনে রাউটার নেটওয়ার্ক লেয়ারে IP Address নিয়ে কাজ করতে পারে।



রাউটার সাধারনত অনেকগুলো LAN (Local Area Network) কে যুক্ত করে WAN (Wide Area Network) তৈরী করতে সাহায্য করে। রাউটার Wired এবং Wireless এই দুই ধরনের হয়। ছবিতে একটি Wireless Router দেখানো হয়েছে। রাউটারের রাউটিং টেবিলে MAC Address এর বদলে থাকে IP Address এবং তার সাথে যুক্ত নেটওয়ার্কগুলোর সম্পর্কে সমস্ত রেকর্ড তার কাছে থাকে, যা দেখে সে সহজেই একটি ডাটা কোন পথ দিয়ে বা কোন পোর্ট দিয়ে যাবে তা নির্দেশ করতে পারে। শুধু তার সাথে সরাসরি যুক্ত নেটওয়ার্কগুলোই নয়, বরং দূরের কোন নেটওয়ার্কে ডাটা পৌছানোর জন্য কোন পথ দিয়ে ডাটাটি পাঠাতে হবে তাও রাউটার ঠিক করে দেয়। প্রতিটি রাউটার কিছু সেকেন্ড পর পর নিজেকে আপডেট করে নেয় এবং তার পার্শ্ববর্তী রাউটারগুলোকে সেই আপডেট মেসেজ পাঠায়, যা দেখে অন্য রাউটারগুলোও নিজেদের আপডেট করে নেয়। যেমন ধরুন একটি নেটওয়ার্ক বা ল্যান কোন কারনে রাউটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, সেক্ষেত্রে রাউটারটি প্রথমে তার নিজের রাউটিং টেবিলটিকে আপডেট করে নেবে এবং তার পার্শ্ববর্তী রাউটারগুলোকে মেসেজ সেন্ড করে জানিয়ে দেবে যে এই ল্যানটি বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এ পুরো পক্রিয়াটি চালু রাখার জন্য বেশকিছু রাউটিং প্রোটোকল (Routing Protocol) রয়েছে যেমন : RIPv2, EIGRP, OSPF ইত্যাদি। প্রোটোকল হচ্ছে কিছু নিয়মের সমন্বয় যা ওই প্রোটোকলের আওতাধীন রাউটারগুলোকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন রাউটার একটি অত্যান্ত বুদ্ধিমান এবং উন্নতমানের ডিভাইস, এ কারনে এর দামটাও কিঞ্চিত বেশি।



সার্ভার (Server) : সার্ভার হচ্ছে একটি তথ্য ভান্ডার যেখানে তথ্য জমা থাকে এবং যখন কোন ক্লায়েন্ট তথ্য চায় তখন সাথে সাথে তাকে সেই তথ্য বা ডাটা সরবরাহ করা সার্ভারের কাজ। বর্তমানে অনেক ধরনের সার্ভার রয়েছে যেমন : ফাইল সার্ভার, ইমেইল সার্ভার, ডাটাবেজ সার্ভার, প্রক্সি সার্ভার, প্রিন্ট সার্ভার, ওয়েব সার্ভার ইত্যাদি।



নেটওয়ার্কের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে সার্ভারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। প্রতিটি সার্ভার একটি নিদিষ্ট বিশেষ ধরনের কাজের জন্য। যেমন : ফাইল সার্ভারের কাজ হলো নেটওয়ার্ক ইউজারদের জন্য বিভিন্ন ফাইল শেয়ার করা যাতে ইউজাররা সহজে যেকোন সময় তাদের প্রয়োজনীয় ফাইলে প্রবেশ করতে পারে। ফাইল সার্ভারে চলে এমন এক নেটওয়ার্ক সার্ভিস যার মাধ্যমে কোন সার্ভার ডাটা স্টোর করা যায়, সেই ডাটা পড়া যায় এবং প্রয়োজনে অন্যত্র স্থানান্তর করা যায়। যেকোন সার্ভারের দুটি গুরুত্বপূর্ন অংশ স্টোরেজ মেমোরী এবং RAM। এ দুটো অংশ কতটা শক্তিশালী হবে তা নির্ভর করে এটি কি ধরনের কাজ করবে এবং কতজন ক্লায়েন্ট এটি ব্যবহার করবে তার উপর।

সূত্র

0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Best Buy Coupons