সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

আসুন সহজে পিসি-টু-পিসি LAN করি (পর্ব – ৬)



আজকের পর্ব : নেটওয়ার্ক সিমুলেশন সফটওয়্যার

আজকে আমি নেটওয়ার্ক সিমুলেশন সফটওয়্যার বা নেটওয়ার্ক সিমুলেটর নিয়ে আলোচনা করব। নেটওয়ার্ক সিমুলেটর কি এবং কেন ব্যবহার করব তা প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন। বড় নেটওয়ার্ক তৈরীর ক্ষেত্রে প্রথমে যে জিনিষটি প্রয়োজন তা হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট প্ল্যানিং/ডিজাইন যাতে নেটওয়ার্কটির বাজেট এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত চাহিদার প্রতিফলন থাকবে। ডিজাইন তৈরী না করেই যদি নেটওয়ার্ক তৈরীর কাজে হাত দেয়া হয়, তাহলে পরবর্তীতে আপনাকে ধাপে ধাপে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে যা সমধান করা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব বা প্রচুর আর্থিক ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায়।

শিক্ষার্থীদের জন্য নেটওয়ার্ক সিমুলেটর আরও গুরুত্বপূর্ন। বাংলাদেশের মত দেশে একজন নেটওয়ার্কিং শিক্ষার্থীর পক্ষে কাজ শেখার জন্য নেটওয়ার্কিং ডিভাইসগুলো সংগ্রহ করা এক কথায় অসম্ভব। ভাল কোন নেটওয়ার্কিং ল্যাবও নেই যেখানে হাতে কলমে প্রাকটিস করার সুযোগ আছে। তাই তাদের জন্য একটি উত্তম সমাধান এই সিমুলেটর, যেখানে তারা বাসায় কম্পিউটারে বসেই নেটওয়ার্কিং প্রজেক্ট তৈরী করতে পারবে এবং পরীক্ষা করে দেখতে পারবে যে তার নেটওয়ার্কটি সুষ্ঠভাবে কাজ করছে কিনা।

বর্তমানে বেশ কিছু নেটওয়ার্কিং সিমুলেটর পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো এবং সহজে ব্যবহার উপযোগী সিমুলেটর হচ্ছে Packet Tracer, যা বিনামূল্যে আপনি নিচের ডাউনলোড লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

সফটওয়্যার ডাউনলোড লিংক : ক্লিক করুন।

ডাউনলোড হয়ে গেলে সফটওয়্যারটি সাধারন যে কোন সফটওয়্যারের মত ইন্সটল করুন।



ইন্সটলের পর সফটওয়্যারটি Open করলে উপরের উইন্ডোটি দেখতে পাবেন।

Packet Tracer ইন্টারফেস পরিচিতি :



উপরের ছবিটি লক্ষ্য করুন। ছবিটিতে আমি মোট ১০টি Component চিহ্নিত করেছি। এগুলোর প্রতিটির পরিচিতি নিচে দেওয়া হলো :

1. Menu Bar : এই Bar এ File, Edit, Options, View, Tools, Extensions এবং Help মেন্যু আছে। আপনি এখানে সাধারন commands যেমন : Open, Save, Print এবং Preferences ইত্যাদি পাবেন।

2. Main Tool Bar : এই মেন্যুতে গুরুত্বপূর্ন কমান্ডগুলোর shortcut icon দেয়া আছে। যেমন: Zoom, Drawing Palette, Device Template Manager, Network Information Button ইত্যাদি।

3. Common Tools Bar : এখানে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত workspace tools গুলো দেয়া আছে। যেমন : Select, Move Layout, Place Note, Delete, Inspect, Add Simple PDU (সাধারন ডাটা প্যাকেট), and Add Complex PDU (অপেক্ষাকৃত জটিল ডাটা প্যাকেট)।

4. Logical/Physical Workspace and Navigation Bar : এর মাধ্যমে আপনি Physical Workspace এবং Logical Workspace এই দুটি মাধ্যমের মধ্যে toggle করতে পারবেন। Physical Workspace আপনাকে একটি physical location তৈরী করতে সাহায্য করবে। যেমন : একটি New City, একটি New Building, একটি New Closet ইত্যাদি। আমরা সাধারনত নেটওয়ার্ক তৈরীর জন্য Logical Workspace ব্যবহার করব।

5. Workspace : এটিই হচ্ছে আসল অংশ যেখানে আপনি নেটওয়ার্কটি তৈরী করবেন। আপনি নেটওয়ার্কটির সিমুলেশন এবং বিভিন্ন তথ্যও এখানেই দেখতে পাবেন।

6. Realtime/Simulation Bar : আপনি এর মাধ্যমে Realtime Mode এবং Simulation Mode এর মধ্যে toggle করতে পারবেন। Realtime Mode এ নেটওয়ার্কটি তৈরী করার পর Simulation Mode এ গিয়ে আপনি ডাটা প্যাকেট নেটওয়ার্কটির মধ্যে দিয়ে কিভাবে যাচ্ছে, কোথাও বাধা পাচ্ছে কিনা তা সকল তথ্য সহকারে দেখতে পারবেন।

7. Network Component Box : এই বক্স থেকে আপনি Workspace এ আপনার নেটওয়ার্কটি তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস এবং কম্পোনেন্টগুলো বাছাই করতে পারবেন। এই বক্সটি Device-Type Selection Box এবং Device-Specific Selection Box এই দুটি ভাগে বিভক্ত।

8. Device-Type Selection Box : এই বক্সে আপনি নেটওয়ার্কিং সকল ডিভাইস পাবেন। যেমন : পিসি, ক্যাবল, সুইচ, হাব, রাউটার, ক্লাউড ইত্যাদি।

9. Device-Specific Selection Box : Device-Type Selection Box থেকে একটি ডিভাইস সিলেক্ট করার পর Device-Specific Selection Box থেকে সেই ডিভাইসের নির্দিষ্ট একটি মডেল সিলেক্ট করতে পারবেন। যেমন : সুইচ ডিভাইসটি সিলেক্ট করার পর এই বক্সটি থেকে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সুইচের যেকোন একটি মডেল বেছে নিতে পারেন।

10. User Created Packet Window : এই উইন্ডোটি ডাটা প্যাকেটগুলোকে একত্রিত করে দেখায়। আপনি নেটওয়ার্কটি ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য একাধিক ডাটা প্যাকেট দিতে পারেন যা এই উইন্ডোটিতে লিস্ট আকারে দেখাবে।

আমি যখন প্রথম এই নেটওয়ার্কিং টিউটোরিয়াল শুরু করেছিলাম, তখন ভেবেছিলাম এটি শুধুমাত্র দুটি পিসির LAN করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। আমি লেখার বিষয়বস্তু এবং উপস্থাপনা সেভাবে সহজ করার চেষ্টা করেছি, যাতে টেকনোলজি বিষয়ে অনভিজ্ঞ যে কেউ আমার লেখা পড়ে সাধারন মানের নেটওয়ার্কিং করতে পারেন। কিন্তু আপনাদের সবার আগ্রহ এবং অনুপ্রেরনার কারনে ধীরে ধীরে টিউটোরিয়ালটি বড় নেটওয়ার্ক তৈরীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন আমি প্রচুর ইমেইল পাই আপনাদের নেটওয়ার্কিং সমস্যার সমাধান চেয়ে, জানার আগ্রহ জানিয়ে এবং লেখার উৎসাহ দিয়ে। আমাকে অনেকেই নেটওয়ার্কিং বিষয়ে আরও এ্যাডভান্স বিষয় নিয়ে লিখতে অনুরোধ করেছেন। আমিও লিখতে আগ্রহী, কিন্তু সেটা হয়ত সবার জন্য আর সহজবোধ্য থাকবে না। তারপরও চেষ্টা করব এই সিরিজটি Continue করার। আগামী পর্বে আমি Packet Tracer সিমুলেটরটি দিয়ে আপনাদেরকে একটি পূনাঙ্গ প্রোজেক্ট তৈরী করে দেখাবো। Packet Tracer দিয়ে তৈরী একটি নেটওয়ার্কের মডেল হতে পারে নিচের ছবির মত :


 


আগের পর্বগুলো :

0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Best Buy Coupons