"মনিটর" এ শব্দটা কিছুদিন আগেও জড়িত ছিল শুধুমাত্র কম্পিউটারের সাথে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পাল্টে গেছে মনিটরের ধরণ ও ব্যবহার। অনেকে
শুধুমাত্র গেমস কিংবা মুভি দেখা অথবা গ্রাফিক্স এর কাজ করার জন্য আলাদাভাবে
মনিটর কিনে থাকে। তাই এ পোষ্টে চেষ্টা করব এলসিডি/প্লাজমা/হাই-ডেফিনেশন
মনিটর সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য যাতে সহজেই আপনি আপনার প্রয়োজনমত মনিটরটি
বেছে নিতে পারেন।
মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে আপনাকে নিচের কয়েকটা টার্ম অবশ্যই জানতে হবে--
** এলসিডি (LCD) মনিটর -- লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে যা ব্যাকলাইট হিসেবে ফ্লুরোসেন্ট আলো ব্যবহার করে। এটি মূলতঃ গেমার আর টিভি দেখার জন্য। যদি আপনি উজ্জ্বল আলোতে বা দিনের বেলা বেশি মনিটর/টিভি ব্যবহার করেন তাহলে আপনার জন্য আদর্শ হবে এলসিডি মনিটর। কারন উজ্জ্বল আলোতে ছবি দেখাতে এলসিডির জুড়ি নেই (এলসিডি প্লাজমা মনিটরের চাইতে উজ্জ্বল ছবি দেখায়)। এতে বিদ্যুৎ খরচ প্লাজমার তুলনায় কম। তবে এই মনিটরে আপনি বেশি ওয়াইড এ্যাংগেলে টিভি দেখতে পাবেন না (নিচে বিস্তারিত)।
** প্লাজমা (Plasma) মনিটর/টিভি-- এই মনিটর/টিভি সাধারণত মুভি দেখার জন্য। ছবি যদি আপনি কম আলোতে (রাতে বা যে ঘরে আলো কম অথবা হোম থিয়েটারে) মুভি বেশি দেখেন তবে আপনার জন্য আদর্শ হবে প্লাজমা টিভি/মনিটর। তাছাড়া প্লাজমা মনিটর আপনাকে এলসিডি টিভির চাইতে বেশি ওয়াইড এ্যাংগেলে টিভি দেখার সুবিধি দেবে। অসুবিধা হল একটাই-এটা এলসিডির চাইতে বেশি কারেন্ট খায়
** এলইডি (LED) টিভি--মূলত এলসিডি টিভি যা ব্যাকলাইট হিসেবে প্রচলিত ফ্লুরোসেন্ট আলোর পরিবর্তে LED ব্যবহার করে। একারনে এতে কন্ট্রাস্ট এবং কালারের সূক্ষতা এলসিডি মনিটরের চাইতে উন্নত।
** হাই ডেফিনেশন (HD) টিভি/মনিটর-- লেটেস্ট প্লাজমা/ এলসিডি মনিটর যার রেজুলুশন প্রচলিত মনিটরের চাইতে বেশি। ছবির স্পষ্টতার জন্য হাই ডেফিনেশন মনিটরের ক্ষেত্রে পিক্সেলের চেয়ে কন্ট্রাস্ট রেশিওকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। শুধুমাত্র 1080i অথবা 720p কে true HDTV ধরা হয়। আর HDTV screens স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে 1080p কে বিবেচনা করা হয়।
এরপরেই যে বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে---
১। মনিটর/স্ক্রিণ রেজুলুশন (screen resolution)-- বর্তমানে প্রায় সকল মনিটর (এইচডি মনিটর সহ) ছবি দেখানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পিক্সেল ব্যবহার করে। এই নির্দিষ্ট সংখ্যক পিক্সেল ব্যবহারের কারনে একটি মনিটরের ছবি প্রদর্শনের জন্য একটি নির্দিষ্ট রেজুলুশন থাকে। যেমন "1366 x 768 " পিক্সেল অথবা "1920 x 1080 " পিক্সেল ইত্যাদি। এখানে প্রথম সংখ্যা horizontal resolution এবং দ্বিতীয় সংখ্যা vertical resolution. এই দুই সংখ্যাকে গুণ করলে যে সংখ্যা পাবেন তা হল সেই মনিটরের মোট পিক্সেল সংখ্যা (যেমন 1920 x 1080 = 2,073,600 পিক্সেল, যাকে সহজ কথায় বলা "2 million" পিক্সেল)। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, যেই মনিটরের পিক্সেল যত বেশি হবে সেই মনিটর তত নিঁখুত ছবি দেখাতে পারবে। আপনি যদি গেম খেলেন/ ইন্টারনেট সার্ফিং বেশি করেন এবং হাই-ডেফিনেশন মনিটর চান তাহলে 1920 x 1200 রেজুলুশন এবং যদি মুভি বেশি দেখেন তাহলে 1920 x 1080 রেজুলুশন পছন্দ করাই ভাল হবে।
লক্ষ করুন- রেজুলুশন যত বড়/বেশি হয় পিক্সেল তত ছোট হয় এবং সেই মনিটর তত নিঁখুত ছবি প্রদর্শন করে।
বামের ছবিতে প্রচলিত মনিটরের ছবি আর ডানের ছবিতে উচ্চ রেজুলুশনের ছবি।
"p" হল ফ্রেম রেট যেখানে "p" এর অর্থ progressive scan অর্থ্যাৎ ছবি দেখানোর সময় এক্ষত্রে ভিডিও ফ্রেমগুলো একটার পর আরেকটা ট্রান্সমিট হয় (ফ্রেমের কোন ওভারল্যাপিং হয়না)। যেমন 1080p হল হাই ডেফিনেশন ভিডিও ফরমেট যার রেজুলুশন1920 x 1080 পিক্সেল (16:9 ratio)।
"i" হল ফ্রেম রেট যেখানে "i" এর অর্থ interlaced-scan অর্থ্যাৎ ছবি দেখানোর সময় জোড় আর বিজোড় ভিডিও ফ্রেমগুলো একে অপরের সাথে interlaced হয়।
progressive scan এর ফ্রেম রেট সাধারনত interlaced-scan এর ফ্রেম রেটের দ্বিগুন হয়। উদাহরনস্বরূপ--interlaced formats, যেমন 480i এবং1080i--৩০ ফ্রেম রেটে ছবি দেখায়; যেখানে progressive formats যেমন 480p, 720p এবং 1080p-- ৬০ ফ্রেম রেটে ছবি দেখায়।
২। কন্ট্রাস্ট রেশিও (Contrast ratio)-- আপনি যদি হাই ডেফিনেশন মনিটর/টিভি কিনতে চান তবে পিক্সেলের চাইতে কন্ট্রাস্ট রেশিওর উপর বেশি জোর দেবেন। কন্ট্রাস্ট রেশিও হল মনিটরের সবচে উজ্জ্বল সাদা আর ঘন কালো রং তৈরি করার ক্ষমতার অনুপাত। তবে বিভিন্ন ব্যান্ডের মনিটরের কন্ট্রাস্ট রেশিওর মধ্যে তফাত করা আসলে কষ্টকর। কারন একেক কোম্পানি তাদের কন্ট্রাস্ট রেশিওর মাপকাঠি একেক রকম মনে করে। তবে যদি একই ব্যান্ডের মধ্যে কিনতে চান তাহলে অবশ্যই কন্ট্রাস্ট রেশিওকে প্রাধান্য দেবেন। কন্ট্রাস্ট রেশিও দুই ধরনের ---
** স্ট্যাটিক (Static) কন্ট্রাস্ট রেশিও--এর অর্থ মনিটরটি একইসাথে সবোর্চ্চ কত উজ্জ্বল (সাদা) আর অনুজ্জ্বল (কালো) আলো তৈরি করতে পারে।
** ডায়নামিক (Dynamic) কন্ট্রাস্ট রেশিও--মানে হল সার্বিকভাবে মনিটরটি সবোর্চ্চ কত উজ্জ্বল (সাদা) আর অনুজ্জ্বল (কালো) আলো তৈরি করতে পারে। বিভিন্ন মনিটরের স্পেসিফিকেশনে মূলতঃ এই রেশিওই দেয়া থাকে
লক্ষ করুন--বামের ছবিতে মনিটর ডিপ ব্ল্যাক তৈরি করতে পারেনি; ডানের ছবি বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন আর মাঝের ছবিতে ছবির ডিটেইল পুরোপুরি এসেছে।
৩। পিক্সেল রেসপন্স টাইম (Pixel response time)-- একটা সিঙ্গেল পিক্সেল চলমান ভিডিওর একটিভ অবস্থা থেকে ইনএকটিভ অবস্থায় রুপান্তর হতে কত সময় নেয় তা বোঝানো করা হয় পিক্সেল রেসপন্স টাইম দিয়ে (বা শুধু রেসপন্স টাইম)। রেসপন্স টাইম মিলি সেকেন্ড দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেকোন ধরনের মনিটরের ক্ষেত্রে রেসপন্স টাইম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুক্ষ ও নির্ভূল ছবির জন্য যতদূর সম্ভব কম রেসপন্স টাইম সম্পন্ন মনিটর কেনার চেষ্টা করুন। রেসপন্স টাইম বেশি হলে ফাস্ট মুভিং অবজেক্টের পেছনে/সাথে ছবির অস্পষ্ট অবয়ব/ছায়া দেখতে পাবেন।
৪। Aspect Ratio-- এটা দিয়ে মূলতঃ মনিটরের স্ক্রিণের shape বোঝানো হয়। গতানুগতিক মনিটর গুলো স্কয়ার/চারকোণা আকৃতির (4:3 ratio) এবং হাই-ডেফিনেশন টিভিগুলো সাধারণত ওয়াইড স্ক্রিণ আকৃতির (16:9 ratio অথবা 16:10 ratio). আপনি যদি গেম খেলতে চান এবং গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করেন তাহলে 16:10 ratio আপনার জন্য বেস্ট অপশন। যদি মুভি দেখাকে প্রাধান্য দেন তাহলে 16:9 ratio হবে সেরা।
উপরে 4:3 ratio এবং নিচে 16:9 ratio
৫। রিফ্রেশ রেট-- মনিটরের রিফ্রেশ রেট হল প্রতি সেকেন্ডে এটি কয়টি ফ্রেম দেখাতে পারে। একে সাধারণত হার্জ (Hz) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। মনিটর ভেদে রিফ্রেশ রেট 60Hz, 120Hz, 240Hz ইত্যাদি হতে পারে। (60Hz মানে হল প্রতি সেকেন্ডে মনিটরটি সেকেন্ডে ৬০টি ফ্রেম দেখাতে পারে)। রিফ্রেশ রেট কম হলে মোশন পিকচারে ব্লার আসতে থাকে এবং অনেকসময় ছবি/ডিসপ্লে কাঁপতে থাকে। কাজেই যতদূর সম্ভব বেশি রিফ্রেশ রেট সম্পন্ন মনিটর প্রেফার করবেন।
৬। Viewing angle--মুভি দেখার জন্য মনিটরের ভিউ এ্যাংগেল গুরুত্বপূর্ণ। মনিটরের কেন্দ্রবিন্দু থেকে ডানে-বামে এবং উপরে-নিচে কত দূর বা এ্যাংগেল থেকে আপনি পরিষ্কার ছবি দেখতে পারবেন (কোন ব্লার বা কালার ডিসটরশন ছাড়া)। থিওরেটিক্যালি এটা ১৮০ ডিগ্রি হলেও বাস্তবে ১৭০ ডিগ্রির বেশি সম্ভব নয়। তবে প্লাজমা মনিটরে এলসিডি মনিটরের চাইতে বেশি এ্যাংগেলে ছবি দেখতে পারবেন।
৭। মনিটরের ইনপুট-আউটপুট সিস্টেম--আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেননা একেক ধরনের কানেকশন একেক কোয়ালিটির ভিডিও এবং অডিও ট্রান্সমিট করে। আর আপনি যদি পিকচার কোয়ালিটির সাথে আপোষ করতে না চান তাহলে এলসিডি বা হাই-ডেফিনেশন মনিটরের সাথে এর ইনপুট-আইটপুট সম্পর্কে একটু ধারণা রাখতে হবে
HDMI (High-Definition Multimedia Interface)--HDMI হল অত্যাধুনিক মাল্টি-পিন কানেক্টর যা একটি সিঙ্গেল কেবলের মধ্য দিয়ে হাই-ডেফিনেশন ভিডিও এবং মাল্টিচ্যানেল (সর্বোচ্চ ৮ চ্যানেল) অডিও ট্রান্সমিট করে। হাই-ডেফিনেশন টিভি/মনিটরে কানেকশনের জন্য আপনার প্রথম চয়েজ হওয়া উচিত HDMI কানেকশন। বর্তমানে প্রায় সকল হাই-ডেফিনেশন মনিটর/টিভিতে HDMI কানেকশন পাওয়া যায়।
HDMI পোর্ট
HDMI কেবল
Component video--এই ধরনের কানেকশন ভিডিও সিগনালকে ৩ ভাগে স্পিলিট করে ট্রান্সমিট করে যার কারনে অন্যান্য এনালগ কানেকশনের চেয়ে এই কানেকশন বেটার ছবি দেখায়। আর Component video কানেকশন একমাত্র এনালগ কানেকশন যা হাই-ডেফিনেশন ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করতে পারে এবং S-video অথবা composite video connections এর চাইতে ভাল ছবি দেখায়।
Component ভিডিও পোর্ট
Component ভিডিও কেবল (সাধারনত লাল, নীল ও সবুজ রঙের হয়)
Composite video কানেকশন--এইটাতে সিগনাল সিঙ্গেল কেবলের মধ্যে দিয়ে ট্রান্সমিট হয় এবং পিকচার কোয়ালিটি S-video অথবা component video এর মত শার্প নয়। এইটা শুধুমাত্র ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করে, অডিও সিগনাল নয়।
Composite video জ্যাক
S-video jack-- চার পিন যুক্ত কানেক্টর যা শুধু ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করে (অডিও নয়)। S-video এর "S" মানে হল "separate" অর্থ্যাৎ ৪টা চ্যানেলের মধ্য দিয়ে আলাদা ভাবে (সেপারেট) ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করে। এই ধরনের কানেকশনে পিকচার কোয়ালটি Composite video কানেকশনের চাইতে ভাল (শার্প) হয়।
S-video কানেক্টর
RCA connector--অডিও এবং ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ৩ রঙের প্লাগ থাকে (সাদা, লাল এবং হলুদ)। হলুদ= ভিডিও (Composite video) এবং লাল+সাদা= ষ্টেরিও অডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করে।
RCA connector প্লাগ
DVI (Digital Visual Interface) কানেকশন---মাল্টিপিন কানেকশন যা সাধারন এবং হাই ডেফিনেশন ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করে। এই ধরনের কানেকশনের পরবর্তী জেনারেশন হল HDMI কানেকশন। কিন্তু এই কানেকশন অডিও ট্রান্সমিট করতে পারেনা। মূলত দুই ধরনের কানেকশন আছে--DVI-D, যা শুধু ডিজিটাল সিগনাল ট্রান্সমিট করে। আর DVI-I যা এনালগ এবং ডিজিটাল সিগনাল ট্রান্সমিট করে।
DVI কেবল
DVI পোর্ট
VGA (Video Graphics Array) connector--যার কম্পিউটার আছে আর তিনি এই কানেকশন লাগাননি/চেনেন না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই কেবল/পোর্টের ব্যাপক প্রচলন দেখা যায় কম্পিউটারে। ভিডিও সিগনাল আর ডাটা ট্রান্সফারে এই ১৫-পিন যুক্ত কানেক্টরের জুড়ি নাই।
VGA কেবল এবং পোর্ট।
তাহলে বেছে নিন আপনার পছন্দের এবং প্রয়োজনীয় মনিটরটি....
মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে আপনাকে নিচের কয়েকটা টার্ম অবশ্যই জানতে হবে--
** এলসিডি (LCD) মনিটর -- লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে যা ব্যাকলাইট হিসেবে ফ্লুরোসেন্ট আলো ব্যবহার করে। এটি মূলতঃ গেমার আর টিভি দেখার জন্য। যদি আপনি উজ্জ্বল আলোতে বা দিনের বেলা বেশি মনিটর/টিভি ব্যবহার করেন তাহলে আপনার জন্য আদর্শ হবে এলসিডি মনিটর। কারন উজ্জ্বল আলোতে ছবি দেখাতে এলসিডির জুড়ি নেই (এলসিডি প্লাজমা মনিটরের চাইতে উজ্জ্বল ছবি দেখায়)। এতে বিদ্যুৎ খরচ প্লাজমার তুলনায় কম। তবে এই মনিটরে আপনি বেশি ওয়াইড এ্যাংগেলে টিভি দেখতে পাবেন না (নিচে বিস্তারিত)।
** প্লাজমা (Plasma) মনিটর/টিভি-- এই মনিটর/টিভি সাধারণত মুভি দেখার জন্য। ছবি যদি আপনি কম আলোতে (রাতে বা যে ঘরে আলো কম অথবা হোম থিয়েটারে) মুভি বেশি দেখেন তবে আপনার জন্য আদর্শ হবে প্লাজমা টিভি/মনিটর। তাছাড়া প্লাজমা মনিটর আপনাকে এলসিডি টিভির চাইতে বেশি ওয়াইড এ্যাংগেলে টিভি দেখার সুবিধি দেবে। অসুবিধা হল একটাই-এটা এলসিডির চাইতে বেশি কারেন্ট খায়
** এলইডি (LED) টিভি--মূলত এলসিডি টিভি যা ব্যাকলাইট হিসেবে প্রচলিত ফ্লুরোসেন্ট আলোর পরিবর্তে LED ব্যবহার করে। একারনে এতে কন্ট্রাস্ট এবং কালারের সূক্ষতা এলসিডি মনিটরের চাইতে উন্নত।
** হাই ডেফিনেশন (HD) টিভি/মনিটর-- লেটেস্ট প্লাজমা/ এলসিডি মনিটর যার রেজুলুশন প্রচলিত মনিটরের চাইতে বেশি। ছবির স্পষ্টতার জন্য হাই ডেফিনেশন মনিটরের ক্ষেত্রে পিক্সেলের চেয়ে কন্ট্রাস্ট রেশিওকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। শুধুমাত্র 1080i অথবা 720p কে true HDTV ধরা হয়। আর HDTV screens স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে 1080p কে বিবেচনা করা হয়।
এরপরেই যে বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে---
১। মনিটর/স্ক্রিণ রেজুলুশন (screen resolution)-- বর্তমানে প্রায় সকল মনিটর (এইচডি মনিটর সহ) ছবি দেখানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পিক্সেল ব্যবহার করে। এই নির্দিষ্ট সংখ্যক পিক্সেল ব্যবহারের কারনে একটি মনিটরের ছবি প্রদর্শনের জন্য একটি নির্দিষ্ট রেজুলুশন থাকে। যেমন "1366 x 768 " পিক্সেল অথবা "1920 x 1080 " পিক্সেল ইত্যাদি। এখানে প্রথম সংখ্যা horizontal resolution এবং দ্বিতীয় সংখ্যা vertical resolution. এই দুই সংখ্যাকে গুণ করলে যে সংখ্যা পাবেন তা হল সেই মনিটরের মোট পিক্সেল সংখ্যা (যেমন 1920 x 1080 = 2,073,600 পিক্সেল, যাকে সহজ কথায় বলা "2 million" পিক্সেল)। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, যেই মনিটরের পিক্সেল যত বেশি হবে সেই মনিটর তত নিঁখুত ছবি দেখাতে পারবে। আপনি যদি গেম খেলেন/ ইন্টারনেট সার্ফিং বেশি করেন এবং হাই-ডেফিনেশন মনিটর চান তাহলে 1920 x 1200 রেজুলুশন এবং যদি মুভি বেশি দেখেন তাহলে 1920 x 1080 রেজুলুশন পছন্দ করাই ভাল হবে।
লক্ষ করুন- রেজুলুশন যত বড়/বেশি হয় পিক্সেল তত ছোট হয় এবং সেই মনিটর তত নিঁখুত ছবি প্রদর্শন করে।
বামের ছবিতে প্রচলিত মনিটরের ছবি আর ডানের ছবিতে উচ্চ রেজুলুশনের ছবি।
"p" হল ফ্রেম রেট যেখানে "p" এর অর্থ progressive scan অর্থ্যাৎ ছবি দেখানোর সময় এক্ষত্রে ভিডিও ফ্রেমগুলো একটার পর আরেকটা ট্রান্সমিট হয় (ফ্রেমের কোন ওভারল্যাপিং হয়না)। যেমন 1080p হল হাই ডেফিনেশন ভিডিও ফরমেট যার রেজুলুশন1920 x 1080 পিক্সেল (16:9 ratio)।
"i" হল ফ্রেম রেট যেখানে "i" এর অর্থ interlaced-scan অর্থ্যাৎ ছবি দেখানোর সময় জোড় আর বিজোড় ভিডিও ফ্রেমগুলো একে অপরের সাথে interlaced হয়।
progressive scan এর ফ্রেম রেট সাধারনত interlaced-scan এর ফ্রেম রেটের দ্বিগুন হয়। উদাহরনস্বরূপ--interlaced formats, যেমন 480i এবং1080i--৩০ ফ্রেম রেটে ছবি দেখায়; যেখানে progressive formats যেমন 480p, 720p এবং 1080p-- ৬০ ফ্রেম রেটে ছবি দেখায়।
২। কন্ট্রাস্ট রেশিও (Contrast ratio)-- আপনি যদি হাই ডেফিনেশন মনিটর/টিভি কিনতে চান তবে পিক্সেলের চাইতে কন্ট্রাস্ট রেশিওর উপর বেশি জোর দেবেন। কন্ট্রাস্ট রেশিও হল মনিটরের সবচে উজ্জ্বল সাদা আর ঘন কালো রং তৈরি করার ক্ষমতার অনুপাত। তবে বিভিন্ন ব্যান্ডের মনিটরের কন্ট্রাস্ট রেশিওর মধ্যে তফাত করা আসলে কষ্টকর। কারন একেক কোম্পানি তাদের কন্ট্রাস্ট রেশিওর মাপকাঠি একেক রকম মনে করে। তবে যদি একই ব্যান্ডের মধ্যে কিনতে চান তাহলে অবশ্যই কন্ট্রাস্ট রেশিওকে প্রাধান্য দেবেন। কন্ট্রাস্ট রেশিও দুই ধরনের ---
** স্ট্যাটিক (Static) কন্ট্রাস্ট রেশিও--এর অর্থ মনিটরটি একইসাথে সবোর্চ্চ কত উজ্জ্বল (সাদা) আর অনুজ্জ্বল (কালো) আলো তৈরি করতে পারে।
** ডায়নামিক (Dynamic) কন্ট্রাস্ট রেশিও--মানে হল সার্বিকভাবে মনিটরটি সবোর্চ্চ কত উজ্জ্বল (সাদা) আর অনুজ্জ্বল (কালো) আলো তৈরি করতে পারে। বিভিন্ন মনিটরের স্পেসিফিকেশনে মূলতঃ এই রেশিওই দেয়া থাকে
লক্ষ করুন--বামের ছবিতে মনিটর ডিপ ব্ল্যাক তৈরি করতে পারেনি; ডানের ছবি বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন আর মাঝের ছবিতে ছবির ডিটেইল পুরোপুরি এসেছে।
৩। পিক্সেল রেসপন্স টাইম (Pixel response time)-- একটা সিঙ্গেল পিক্সেল চলমান ভিডিওর একটিভ অবস্থা থেকে ইনএকটিভ অবস্থায় রুপান্তর হতে কত সময় নেয় তা বোঝানো করা হয় পিক্সেল রেসপন্স টাইম দিয়ে (বা শুধু রেসপন্স টাইম)। রেসপন্স টাইম মিলি সেকেন্ড দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেকোন ধরনের মনিটরের ক্ষেত্রে রেসপন্স টাইম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুক্ষ ও নির্ভূল ছবির জন্য যতদূর সম্ভব কম রেসপন্স টাইম সম্পন্ন মনিটর কেনার চেষ্টা করুন। রেসপন্স টাইম বেশি হলে ফাস্ট মুভিং অবজেক্টের পেছনে/সাথে ছবির অস্পষ্ট অবয়ব/ছায়া দেখতে পাবেন।
৪। Aspect Ratio-- এটা দিয়ে মূলতঃ মনিটরের স্ক্রিণের shape বোঝানো হয়। গতানুগতিক মনিটর গুলো স্কয়ার/চারকোণা আকৃতির (4:3 ratio) এবং হাই-ডেফিনেশন টিভিগুলো সাধারণত ওয়াইড স্ক্রিণ আকৃতির (16:9 ratio অথবা 16:10 ratio). আপনি যদি গেম খেলতে চান এবং গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করেন তাহলে 16:10 ratio আপনার জন্য বেস্ট অপশন। যদি মুভি দেখাকে প্রাধান্য দেন তাহলে 16:9 ratio হবে সেরা।
উপরে 4:3 ratio এবং নিচে 16:9 ratio
৫। রিফ্রেশ রেট-- মনিটরের রিফ্রেশ রেট হল প্রতি সেকেন্ডে এটি কয়টি ফ্রেম দেখাতে পারে। একে সাধারণত হার্জ (Hz) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। মনিটর ভেদে রিফ্রেশ রেট 60Hz, 120Hz, 240Hz ইত্যাদি হতে পারে। (60Hz মানে হল প্রতি সেকেন্ডে মনিটরটি সেকেন্ডে ৬০টি ফ্রেম দেখাতে পারে)। রিফ্রেশ রেট কম হলে মোশন পিকচারে ব্লার আসতে থাকে এবং অনেকসময় ছবি/ডিসপ্লে কাঁপতে থাকে। কাজেই যতদূর সম্ভব বেশি রিফ্রেশ রেট সম্পন্ন মনিটর প্রেফার করবেন।
৬। Viewing angle--মুভি দেখার জন্য মনিটরের ভিউ এ্যাংগেল গুরুত্বপূর্ণ। মনিটরের কেন্দ্রবিন্দু থেকে ডানে-বামে এবং উপরে-নিচে কত দূর বা এ্যাংগেল থেকে আপনি পরিষ্কার ছবি দেখতে পারবেন (কোন ব্লার বা কালার ডিসটরশন ছাড়া)। থিওরেটিক্যালি এটা ১৮০ ডিগ্রি হলেও বাস্তবে ১৭০ ডিগ্রির বেশি সম্ভব নয়। তবে প্লাজমা মনিটরে এলসিডি মনিটরের চাইতে বেশি এ্যাংগেলে ছবি দেখতে পারবেন।
৭। মনিটরের ইনপুট-আউটপুট সিস্টেম--আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেননা একেক ধরনের কানেকশন একেক কোয়ালিটির ভিডিও এবং অডিও ট্রান্সমিট করে। আর আপনি যদি পিকচার কোয়ালিটির সাথে আপোষ করতে না চান তাহলে এলসিডি বা হাই-ডেফিনেশন মনিটরের সাথে এর ইনপুট-আইটপুট সম্পর্কে একটু ধারণা রাখতে হবে
HDMI (High-Definition Multimedia Interface)--HDMI হল অত্যাধুনিক মাল্টি-পিন কানেক্টর যা একটি সিঙ্গেল কেবলের মধ্য দিয়ে হাই-ডেফিনেশন ভিডিও এবং মাল্টিচ্যানেল (সর্বোচ্চ ৮ চ্যানেল) অডিও ট্রান্সমিট করে। হাই-ডেফিনেশন টিভি/মনিটরে কানেকশনের জন্য আপনার প্রথম চয়েজ হওয়া উচিত HDMI কানেকশন। বর্তমানে প্রায় সকল হাই-ডেফিনেশন মনিটর/টিভিতে HDMI কানেকশন পাওয়া যায়।
HDMI পোর্ট
HDMI কেবল
Component video--এই ধরনের কানেকশন ভিডিও সিগনালকে ৩ ভাগে স্পিলিট করে ট্রান্সমিট করে যার কারনে অন্যান্য এনালগ কানেকশনের চেয়ে এই কানেকশন বেটার ছবি দেখায়। আর Component video কানেকশন একমাত্র এনালগ কানেকশন যা হাই-ডেফিনেশন ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করতে পারে এবং S-video অথবা composite video connections এর চাইতে ভাল ছবি দেখায়।
Component ভিডিও পোর্ট
Component ভিডিও কেবল (সাধারনত লাল, নীল ও সবুজ রঙের হয়)
Composite video কানেকশন--এইটাতে সিগনাল সিঙ্গেল কেবলের মধ্যে দিয়ে ট্রান্সমিট হয় এবং পিকচার কোয়ালিটি S-video অথবা component video এর মত শার্প নয়। এইটা শুধুমাত্র ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করে, অডিও সিগনাল নয়।
Composite video জ্যাক
S-video jack-- চার পিন যুক্ত কানেক্টর যা শুধু ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করে (অডিও নয়)। S-video এর "S" মানে হল "separate" অর্থ্যাৎ ৪টা চ্যানেলের মধ্য দিয়ে আলাদা ভাবে (সেপারেট) ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করে। এই ধরনের কানেকশনে পিকচার কোয়ালটি Composite video কানেকশনের চাইতে ভাল (শার্প) হয়।
S-video কানেক্টর
RCA connector--অডিও এবং ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ৩ রঙের প্লাগ থাকে (সাদা, লাল এবং হলুদ)। হলুদ= ভিডিও (Composite video) এবং লাল+সাদা= ষ্টেরিও অডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করে।
RCA connector প্লাগ
DVI (Digital Visual Interface) কানেকশন---মাল্টিপিন কানেকশন যা সাধারন এবং হাই ডেফিনেশন ভিডিও সিগনাল ট্রান্সমিট করে। এই ধরনের কানেকশনের পরবর্তী জেনারেশন হল HDMI কানেকশন। কিন্তু এই কানেকশন অডিও ট্রান্সমিট করতে পারেনা। মূলত দুই ধরনের কানেকশন আছে--DVI-D, যা শুধু ডিজিটাল সিগনাল ট্রান্সমিট করে। আর DVI-I যা এনালগ এবং ডিজিটাল সিগনাল ট্রান্সমিট করে।
DVI কেবল
DVI পোর্ট
VGA (Video Graphics Array) connector--যার কম্পিউটার আছে আর তিনি এই কানেকশন লাগাননি/চেনেন না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই কেবল/পোর্টের ব্যাপক প্রচলন দেখা যায় কম্পিউটারে। ভিডিও সিগনাল আর ডাটা ট্রান্সফারে এই ১৫-পিন যুক্ত কানেক্টরের জুড়ি নাই।
VGA কেবল এবং পোর্ট।
তাহলে বেছে নিন আপনার পছন্দের এবং প্রয়োজনীয় মনিটরটি....
মূল লেখাটি দেখুন এখানে
0 টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন