শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১২

ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ‘ফ্রীল্যান্সার’ টিউটোরিয়ালঃ পর্ব ১০ (শেষ)


দেখতে দেথতে ফ্রীলান্সিং নিয়ে পূর্বে ৯টি টিউটোরিয়াল প্রকাশ করেছি। সাধ্যমত চেষ্টা করেছি একদম প্রথম থেকে সব বিষয়গুলোকে সহজ ভাষায় সাজিয়ে উপস্থাপন করতে। আজ শেষ পর্বে কিছু গুরুপ্তপূর্ণ কথা বলেই শেষ করবো, এই বিষয়গুলো অনুসরন করতে পারলে একজন সফল ফ্রীলান্সার হতে বেশি সময় ব্যয় করতে হবে না বলে আশা রাখছি। তো চলুন শুরু করি…
 
যেকোন কাজে নিজেকে প্রোফেশনাল ভাবাটা যুক্তিযুক্ত মনে করি। তাহলেই কাজের মজা পাওয়া এবং নিজের মেধার সঠিক ব্যবহার করা যায়। কারন, যখন কেউ নিজের জন্য কাজ করে বেশির ভাগ-ই সময় এবং মেধাকে ঠিক কাজে লাগাতে পারে না। এক্ষেত্রে কাজটিকে অনেকটা নিজের করে ভাবাটাই সমস্যার শুরু। এধারনাটি পরিবর্তন করে সব কাজকে আপনার ক্লাইন্টের কাজ মনে করে শুরু করে দিন। দেখবেন কাজটি অতি দ্রুত এবং সময়ের মধ্যে আপনার কাঙ্খিত রূপ দিতে পেরেছেন। এখন প্রশ্ন হল, আপনি কি নিজেকে প্রোফেশনাল ভাবতে লজ্জ্বা/ভয় পান? ;) যদি লজ্জ্বা/ভয় পান তাহলে আপনাকে দিয়ে কোন কাজই হবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই ধারনাটি পাল্টায় ফেলুন। নিজের কাজকেই অন্যের কাজ মনে করে কাজটি শুরু করুন। আর নিজেকে প্রোফেশলান না ভাবতে পারলে আপনার সারা জীবনের কর্ম ফল “শূণ্য”!!!

এবার মূল আলোচনা:

প্রোফেশনালিজম, নিজের কাজে মানদন্ড। এক্ষেত্রে আমি কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে নিজেকে সবসময় মূল্যায়ন করতে পছন্দ করি এবং তাতে ফলাফলও ভালই পাচ্ছি। আমার পাকিস্তান এর ক্লাইন্ট এবং আমি এক সাথে কাজ করছি অনেক দিন প্রায় ৩ বছর হবে। প্রথম প্রথম প্রায় উনার আর মাঝে প্রতিটি কাজের মূল্য নির্ধারন করতে সমস্যা হত। কারন কাজের ধরনগুলো একটা আরেকটা থেকে আলাদা। আর উনি আমাকে কাজে রেট অনেক কম দিতে চাইতেন, তারপরও এক পযায়ে একটা মূল্য নিধারন করে কাজ করতাম। যদিও আমার লাভ হতনা তেমন একটা, তারপরেও এভাবে চললো কিছুদিন। লাভ এই জন্যই প্রথমে বেশি চাইতাম না কারন কাজটি আমার জন্য কমফর্ট্যাবল এবং কাজগুলো ২/৩ দিন সময়ের মধ্যে করে দেয়া যায়।
আমি সবসময় নিজের কাজগুলোকে অন্যের সাথে তুলনা করি। কাজটি ভাল করতে পারলাম কিনা সেটি দেখি। এর অর্থ হল নিজেরই নিজের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়ার প্রবণতা। আর ঐ যে প্রথমেই বলেছি, প্রোফেশনালিজম, নিজের কাজে মানদন্ড। এটিকে আত্তস্থ্য করতে সব সময় চেষ্টা করতাম, এখনও করি। তারপর, কাজ করতাম আর কিছু দিন পরপর আমি মূল্য বাড়ানোর জন্য বলতাম। বায়াররাও আস্তে আস্তে রেটও বাড়াতেন কোন রকম কথা ছাড়াই। এবং কিছু কিছু করে এখন বায়ারদের থেকে ন্যায্য পাওনাই পাচ্ছি। :) কারন আমার সাথে কাজ করতে করতে তারা কাজের মানটাকে বুঝতেন। আর বুঝবেন না বা-ই কেন? আমিতো কাজ করছি তাদের জন্য, তারা যদি আমার থেকে তাদের কাজ আদায় করে নেন ভাল মতই তাহলে তারা অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করতেও কার্পন্য করবেন না এবং বর্তমানে করেনো না।
আসলে যেকোন কাজে মূল্য নির্ধারনের মূল বিষয়টি নিজের কাজের মানের উপরেই নির্ভর করে। হয়তো অনেকেই আপনাকে বলবে, আপনার তো এই কাজটি করতে সামান্য সময়ই যথেষ্ট্য। তাহলে এতো দাম হাকাচ্ছেন কেন? কারন এটা ব্যবসায়ের একটি ঐতিহ্যগত প্রথা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে, ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে দর কাষাকষি। উপযুক্ত ছোট উদাহরনের মাধ্যমে ব্যাপারটি আলোচনা করছিঃ
ধরুন, আপনি একজন ইলেক্ট্রিক টর্জ মেরামতকারী। প্রায় বিকল/নষ্ট একটি টর্জ নিয়ে একজন আপনার কাছে এসে তার সমস্যার কথা জানালো। আপনি সমস্যাটি বুঝে কয়েক মিনিটেই ঠিক করে দিলেন। পরিশ্রমিক হিসাবে আপনি দাবি করলেন ১০০ টাকা। এখন টর্জ এর মালিক আপনাকে প্রশ্ন করে বসলো, “স্ক্রু টাইট দেয়ারমত মাত্র কয়েক মিনিটের কাজের জন্য ১০০ টাকা দিতে হবে কেন? আপনি তো বেশি চাচ্ছেন।” তিনি এমনটা প্রশ্ন করতেই বা বলতেই পারেন। আসলেই ভিতরের ব্যাপারটিতো আর তিনি জানেন না। আপনার কাজ হচ্ছে তাকে ব্যপারটি বুঝিয়ে বলা এইভাবে, “দেখুন, কাজটি কয়েক মিনিটের তা ঠিক। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই কয়েক মিনিটের কাজটি করতে আমার কত দিন অন্য মিস্ত্রির পিছনে ঘুড়তে হয়েছে। কতদিন তার দোকানের বাবুর্চিগিরী করতে হয়েছে। কত দিন তার বাসার জন্য বাজার করতে হয়েছে। তারপর না তার কাছে এসব কাজ শিখার সুযোগ পেয়েছি তার যন্ত্রপাতি নাড়ার অনুমতি পেয়েছি। এখন আপনিই বলুন, আমার যতদিন, সময় এবং শ্রম ব্যয় করে এসব শিখেছি। তার কাছে এই কয়েক মিনিটের কাজের মূল্য কি আরো অনেক বেশি হতে পারে না?” :)
নিজের কাজকে অন্যের কাজে প্রেসেন্ট করতে জানুন। তাহলে, আশা করা যায় আপনার পণ্যের ক্রেতা যদি একজন সুস্থ মস্তিস্ক এবং বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি হন তবে, তিনি আর কোন প্রতি কথা না বলে আপনা পাওনা দিতে বাধ্য হবেন। আসলে এই উদাহরনটি শুধু মাত্র আপনার কাজের মানদন্ডকে মূল্যের সাথে তুলনা করতেই তুলে ধরা। :)

উদাহরণটি অনুসারে আমার যুক্তি: নতুনদের জন্য অনুস্বরনীয় !
১. নিজের কাজের মূল্য নিজেই নির্ধারন করবেন, তবে হুট করে অতিরিক্ত দাম হাকাবার মত ভুল করবেন না। একদম নতুন অবস্থায় আলোচনা সাপেক্ষে কাজ কাজ করবেন। কারন নতুন অবস্থায় নিজের কাজ সম্পর্কে ভালমত রিভিউ করতে না পারলে অযাথা মূল্য বেশি চাইলেও পাবেন না।
২. যেকোন কাজ কোন বায়ার এর সাথে শুরু করার আগে তার সাথে ভবিষতেও কাজ করতে পারেন বা সে দেয় এমন চিন্তা নিয়েই কথা বলবেন। আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে কাজের রেট বাড়ান।
৩. প্রধম অবস্থাতে যেকোন কাজের জন্য এবং স্থায়ীভাবে বায়ার ধরার জন্য কাজ কম রেটেই করতে পারেন। তবে, কেউ আপনাকে রেশি রেট দিলে সেটা ভাল। বায়ার আর আপনার মধ্যে পারস্পানিক সম্পর্ক যেন ঠিক থাকে সেভাবে কাজ সম্পন্নকরে যাবেন। উভয়ই কাজের মূল্য এর ব্যাপারে আলোচনা করে স্থির করবেন। আপনার সাথে কোন বায়ারের মূল্য নির্ধারনে বার বার সমস্যা হলে তার সাথে কাজ না করাই ভাল। কারন, বাস্তবিকতার আড়ালে এধরনের বায়ারদের লেনদেনের কোন ভবিষত সম্পর্ক সৃষ্টি হয় না। কার কেউ ছাড় না দিলে ভবিষতে কাজ করার ইচ্ছাও জাগবে না। এ কারনে এই ধরনের মানুসিকতা না রেখে দুই পক্ষকেই সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করাটাই ভাল এবং সুদূর প্রসারি।
৪. বার বার ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলছি, হয়তো অনেকে বিরক্ত হচ্ছেন। কেউ হয়তো ভাবছেন, দুনিয়াতে এতো বায়ার থাকতে কেন ভবিষতে কাজ করার কথা বলছি, কারন হল: আপনি কাজ করছেন ঠিক আছে, হয়তো আপনি যে কাজটি পারেন সে কাজটির জন্য দাম এ ছাড় দিতে রাজি নন আপনি। এবং আপনার সেই কাজটি অন্যরাও সচরাচর জানে। তাই মূল্য কন্সিডার না করার কারনে কাজটি আপনি হারাতে পারেন, সাথে তার মাধেমে আরো অন্য বায়ার আসার সম্ভাবনাকেও।নিশ্চিত আয় থেকেও বিরত থাকলেন।
৫. এবার যদি আসেন দুই পক্ষের যোগ্যতা নিয়ে বলতে: তবে বলবো কেউ বিনা পয়সায় কিছুই অর্জন করতে পারে না। সবাইকেই অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু যখনই প্রোফেশনালিজম এর অন্তর্ভূক্ত হবেন এখানেই চিন্তা করে পা রাখবেন প্রথম দিকের পদক্ষেপ গুলো। যেমন, একজন ডাক্তার হয়তো লন্ডন থেকে ডাক্তারি পাশ করে আসছেন। লক্ষ টাকা খরচ করে নিজের চেম্বার সাজিয়েছেন। কিন্তু উনি সেবার বিনিময়ে কিছু দাম ছাড় দেন না বলেই হয়েতো “উনার চেম্বার ফাকা”! আপনি নিজে প্রথম বার হয়তো তার বেধে দেয়া দামেই দাত তুললেন কিন্তু, তার নাছোড়বান্দা দাম এর কারনে হয়তো পরবতীতে তার কাছে আর যাবেন না এবং অন্যদের কেও তার কাছে রেফার করবেন না। কি ঠিক বলছি কিনা? ;) 

 লিখেছেন : আরিফুল ইসলাম (শাওন)

0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Best Buy Coupons